বাংলাদেশের বিরল প্রজাতির হলুদ পদ্ম গোমতী

গোমতী নদীর প্লাবনভূমিতে এটি জন্মানোর কারণে এই নাম। এশীয় পদ্মের বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifera আর এই হলুদ পদ্মের বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে gomoti, Bangla

 

হলুদ পদ্ম গোমতী

পদ্ম বা লোটাস গ্রামবাংলার মানুষের কাছে অতি পরিচিত ফুল। নামটি মনে পড়লে 'গোবরে পদ্মফুল' নামের প্রবচনটিও মনে পড়ে যায়।সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার 'কেউ কথা রাখে নি' কবিতায় বলেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্মের কথা। তবেএবার কুমিল্লায় পাওয়া গেছে এক বিরল প্রজাতির হলুদ পদ্ম। গবেষকরা এই হলুদ পদ্মের নাম দিয়েছেন ‘গোমতী’। গোমতী নদীর প্লাবনভূমিতে এটি জন্মানোর কারণে এই নাম। এশীয় পদ্মের বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifera আর এই হলুদ পদ্মের বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে  gomoti, Bangladesh   শব্দ দুটি যোগ হবে।

বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার বুড়িচংয়ে পাওয়া হলুদ পদ্ম বাংলাদেশ তো বটেই,গোটা এশিয়াসহ অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের কোথাও হলুদ পদ্মের কোনো প্রজাতি নেই। প্রশান্ত মহাসাগরের এক পাশে দেখা যাওয়া সাদা ও গোলাপি রঙের পদ্মকে বলা হয় এশীয় পদ্ম। আর উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় দেখা যাওয়া হলুদ রঙের পদ্মটিকে আমেরিকান পদ্ম নামে ডাকা হয়। তাই কুমিল্লায় বুড়িচংয়ে পাওয়া হলুদ পদ্ম নিয়ে দেশের উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।  আমেরিকান পদ্ম কোনোভাবে বাংলাদেশে বংশবিস্তার করল কিনা এই প্রশ্নও জেগেছিল অনেকের মনে।

 হলুদ পদ্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের একদল শিক্ষক তাতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তাঁরা কুমিল্লার গোমতী নদীতে জন্মানো ওই পদ্ম নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন এবং এর নমুনা সংগ্রহ করে তা নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর তাঁরা নিশ্চিত হন যে এটি আমেরিকান পদ্ম নয়। বিজ্ঞানীদের দলটি বলছেন, এটি আসলে এশীয় পদ্মেরই একটি নতুন প্রকরণ বা ধরন, যা বাংলাদেশেই প্রথম দেখা গিয়েছে।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল হাসানের নেতৃত্বে একই বিভাগের অধ্যাপক আল মুজাদ্দেদ আলফাসানী ও অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিন ওই পদ্ম চিহ্নিত করার জন্য  গবেষণা করেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব প্ল্যান্ট টেক্সোনমির বিজ্ঞান সাময়িকী প্ল্যান্ট টেক্সন এর ডিসেম্বর ২০২০ সংখ্যায় এ ব্যাপারে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে গবেষক দল ওই হলুদ পদ্মের নাম দিয়েছেন ‘গোমতী’। গোমতী নদীর প্লাবনভূমিতে এটি জন্মানোর কারণে এই নাম দিয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।

 গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি এশীয় পদ্মের একটি প্রকরণ।

অন্য সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আল মুজাদ্দেদ আলফাসানী জানিয়েছেন, “ পদ্মের এই নতুন প্রকরণ প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছে। দেখতে এশিয়ান পদ্মের মতো হলেও গঠনগত কিছু পার্থক্য আছে।  তবে আমেরিকান হলুদ পদ্মের সঙ্গে এর অমিল অনেক বেশি।”

গবেষক দল আরো বলেছেন, কোনো একটি উদ্ভিদের একটি থেকে আরেকটি প্রজাতির ফুল, কাণ্ড, পাতা, পুংকেশর, স্ত্রীকেশর, পরাগরেণুসহ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকে। একটির সঙ্গে আরেকটি মিল অমিলের ধরনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, সেটি কি কোন প্রজাতি, নাকি একটি প্রকরণ?

বিজ্ঞানীরা ধানের উদাহরণ দিয়ে বলছেন, যেমন ধান নিজে একটি স্বতন্ত্র প্রজাতি। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে এবং মানুষের গবেষণার মাধ্যমে ধানের হাজার হাজার প্রকরণ তৈরি হয়েছে। একটি প্রকরণ থেকে আরেকটি প্রকরণের পার্থক্য সামান্য; কিছু গাছ, ফল, দানাসহ অন্য সবকিছুই প্রায় একই রকমের। যেমন বাংলাদেশে যে এশীয় পদ্মটি দেখা যায়, তা একটি প্রকরণ, কিন্তু দুটি রঙের হয়ে থাকে। পদ্মের দুটো প্রজাতি ও দুই হাজারের মতো প্রকরণ রয়েছে।

তবে দেশের উদ্ভিদ শ্রেণিবিদ্যার জনক হিসেবে খ্যাত অধ্যাপক সালার খান তাঁর এক প্রবন্ধে বাংলাদেশে হলদু রঙের পদ্ম আছে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি কোথায় আছে, তা তিনি উল্লেখ করে যাননি। অবশেষে সেই বিরল হলুদ পদ্মের সন্ধান তবে পাওয়া গেলো।

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.