আমাকে তারা জিজ্ঞেস করে, বিসিএসের জন্য কত আগে থেকে প্রিপারেশন নিতে হবে? যদি বলি, বিসিএস পরীক্ষার কয়েক মাস আগে, তারা অবাক হয়। যদি বলি ক্লাস ওয়ান থেকে, তারা আরও বেশি অবাক হয়। এজন্য আগে 'বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস' ব্যাপারটা বুঝতে হবে। বেসরকারি চাকরি থেকে সরকারি চাকরির দিকে মানুষের আগ্রহ বেশি। আবার সরকারি চাকরিগুলোর মধ্যে বিসিএস সবচেয়ে সম্মানজনক ও প্রতিযোগিতামূলক। কারণ চাকরির দিক দিয়ে এটি প্রথম শ্রেণির। পাশাপাশি চাকরির স্থায়িত্ব বা নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা, ক্ষমতা, পর্যাপ্ত বেতনভাতা, গাড়িবাড়ি পাওয়াসহ আরও নানান রকমের সুযোগসুবিধা।
বিসিএস ক্যাডার হতে হলে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত অনার্স শেষ করতে হয়। তারপর ২০০ নম্বরের এমসিকিউ তথা প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ৪/৫ লাখ পরীক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করলেও টেকানো হয় ১৫ হাজারের মতো পরীক্ষার্থীকে। অতঃপর ৯০০ নম্বরের রিটেন বা লিখিত পরীক্ষায় বসতে হয়। এখান থেকে বাছাই করে কিছুকে ২০০ নম্বরের ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ করা হয়। রিটেন এবং ভাইভার নম্বর যোগ করে মেধাতালিকা তৈরি করা হয়। তারপর আছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন, ইউএনও ভেরিফেকেশনসহ আরও কিছু ধাপ। সর্বশেষ ৫০০/৬০০ লোককে জেনারেল ক্যাডারগুলোর জন্য মনোনীত করা হয়, গেজেটেড অফিসার হিসেবে স্বীকৃত হয়।
বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য, ইংরেজি গ্রামার ও সাহিত্য, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি, সাধারণ গণিত, মানসিক দক্ষতাসহ ভূগোল, পৌরনীতি পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার হতে হয়। অর্থাৎ সব বিষয় আপনাকে পারতে হবে, হতে হবে অলরাউন্ডার।
সুতরাং আপনি যদি নিজেকে অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে তুলতে চান, তাহলে আপনাকে অনার্স ফার্স্ট ইয়ার থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আর যদি বিসিএসের প্রস্তুতি বলতে আপনি বুঝাতে চান সরাসরি বিসিএস পরীক্ষার গাইডবই কবে থেকে পড়তে হবে, তাহলে তার উত্তর হচ্ছে ফোর্থ ইয়ারে ওঠে অর্থাৎ বিসিএস পরীক্ষার ৬ মাস, ১ বছর আগে।
বর্তমান সময়ে ২ শ্রেণির লোক দেখা যায়। কেউ বলে ফার্স্ট ইয়ার থেকে কীসের বিসিএস? কেউ বলে ফার্স্ট ইয়ার থেকেই প্রস্তুতি লাগবে। কিন্তু মূলকথা হলো, বিসিএসের জন্য গাইড কিনে পড়তে হবে চতুর্থ বর্ষে গিয়ে কিন্তু প্রস্তুতি শুরু করতে হবে প্রথম বর্ষ থেকেই। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পর থেকেই নিজেকে তৈরি করা শুরু করতে হবে। শুধু ইংরেজি গ্রামার পারলে হবে না, শব্দভাণ্ডারও বাড়াতে হবে নিয়মিত। রিডিং, রাইটিং, লিসেনিং, স্পিকিং এই ৪টি বিষয়েও নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। কম্পিউটার ও প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। ম্যাথ জানতে হবে। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি সম্পর্কে জানতে নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এ--সবই বিসিএস প্রস্তুতির অংশ। যদি বলেন গাইড মুখস্থের কথা। বলবো, সেটা এত আগে না। যদি বলেন অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার কথা। বলবো, এত দেরি কেন?
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরিক্ষা সার্কুলার
লেখকঃ নাবিল তুরাব
শিক্ষার্থী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।