বাংলা নাটকের সেকাল - একাল, চিরায়ত সংস্কৃতি কোন পথে?

বাংলা সিনেমা - নাটক কি আমাদের চিরায়ত কৃষ্টি , সংস্কৃতি , নীতি-নৈতিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? সাধারণত একজন মানুষ কী দেখবে কী দেখবে না, তার কী পছন্দ, কী
 
Bangla Natok In 2022

বাংলা সিনেমা - নাটক কি আমাদের চিরায়ত কৃষ্টি , সংস্কৃতি , নীতি-নৈতিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে?
সাধারণত একজন মানুষ কী দেখবে কী দেখবে না, তার কী পছন্দ, কী নয় সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। কিন্তু যখন কোনো সিনেমা বা নাটক বিনোদন দেয়ার নামে যদি দেশীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় তখন সেই নাটক বা সিনেমা নিয়ে সমালোচনা করা উচিত।

সমাজের উপর, সংস্কৃতির উপর কেমন প্রভাব পড়বে সেটা না ভেবে যখন থেকে একই ধারার রোমান্টিক, ভাঁড়ামোমূলক নাটক তৈরি হওয়া শুরু হয়েছে ঠিক তখন থেকেই নষ্ট হওয়া শুরু হয়েছে বাংলা সংস্কৃতির এক অন্যন্য উপাদান বাংলা নাটক। হাতেগোনা কিছু ভালো নির্মাতাদের দৌলতে এখনো শৈল্পিক উপাদানে পরিপূর্ণ কিছু নাটক বাংলাদেশে হয়, বাস্তবত লোভী প্রকৃতির কিছু পরিচালক সেই ছিটেফোঁটা বেঁচে থাকা শিল্পটাকেও রীতিমত ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে।

 দুঃখের বিষয় হলো আধুনিকতার নামে আজ বহু দর্শক আবেগে পড়ে নিজেদের অস্তিত্ব ভুলতে বসেছে। এই ধারায় "ব্যাচেলর পয়েন্ট" নিয়ে একটু কিছু বলতেই হয়। কারণ এই নাটকের ভক্তের চেয়ে অন্ধ ভক্তের সংখ্যাটা একটু বেশি যাদের অধিকাংশই সমালোচনা নিতে পারেনা। খুব বেশি হলে 'তারছেড়া ভাদাইম্মা, 'রিপন ভিডিও' এবং ‘হিরো আলমের ভিডিও’র চাইতে ব্যাচেলর পয়েন্ট টেকনিক্যালি একটু আধুনিক ব্যাস। 'ব্যাচেলর পয়েন্ট' নিয়ে এর বেশি ধারাবাহিক সমালোচনা  করা অনেকে নিতে পারেন না।

'বাংলা নাটক' শব্দটা শোনা মাত্রই সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে, যখন দুপুরে ভাত খেয়ে পুরো পরিবার - প্রতিবেশী মিলে টিভির পর্দার সামনে বসে একসাথে 'হারকিপ্টে'র মত নাটক দেখে বিনোদন  পেতাম। কয়েকবছরের পার্থক্যে বর্তমানে পরিবার নিয়ে একসাথে নাটক দেখার পাঠ প্রায় উঠেই গিয়েছে। কিন্তু কেন?

কারণ আমাদের মূলধারার সংস্কৃতির ছিঁটেফোটাও বর্তমান সময়ের নাটকে প্রতিফলিত হচ্ছে না। অধিকাংশ পরিচালকই শুধুমাত্র কিছু হিট ফর্মূলা ফলো করে একের পর এক নাটক বানিয়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে 'প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া' বিষয়টা নিয়ে বর্তমানে মনে হয় হাজারখানেক একই ধরনের নাটক হয়েছে। এসব নাটকে আমাদের মূল্যবোধসম্পন্ন শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিফলন বা নীতি-নৈতিকতার প্রদর্শন এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় ছ্যাকা খেয়ে মাদকাসক্ত হওয়ার দৃশ্য।
আধুনিকতার নামে নির্মাতারা ভুলে বসে আছেন নিজেদের অস্তিত্ব, শিল্প-সংস্কৃতি, আচার-আচরণের রক্ষণশীলতার মত বিষয়গুলো। তাছাড়া পারিবারিক ও ধর্মীয় শাসন-বারণের কোনো আবহ বর্তমান নাটকে দেখতে পাওয়া যায়না।

একটা সময় ছিল যখন শুক্রবারে দুপুরে জুম্মার পর  পরিবারের  সবাই বসে নাটক বা সিনেমা দেখা হতো। তখন কারো মনে প্রশ্ন আসতো না যে সিনেমা দেখা আমাদের জন্য হারাম কিনা, কিন্তু এখন এই প্রশ্ন আসে। কেন আসে এই প্রশ্ন? 

কারণ তখন নাটক - সিনেমায় এখনকার মত নোংরামি ছিল না। তখন বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ ছিলো। যেখানে ধর্মীয় শাসন - বারণের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়গুলো নাটক সিনেমায় তুলে ধরা হতো। কুসংস্কার তুলে ধরা হতো। বিপদে-আপদে আল্লাহর নাম নেয়া, নামাজ পড়া, আজান এবং মসজিদের দৃশ্য প্রায় প্রত্যেক নাটক-সিনেমায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। বিভিন্ন চরিত্রগুলোর সংলাপের মাধ্যমে ধর্মীয় চেতনার প্রকাশ পেতো। অথচ এখন অনেকসময় ধর্মীয় বিষয়গুলো মজার ছলে দেখানো হয়। অনেক নির্মাতা মনে করেন ধর্মীয় বিষয় তুলে ধরলে তাদের মৌলবাদী বলা হবে।
আমরা যদি পার্শ্ববর্তী কলকাতার সমালোচিত সিরিয়ালগুলোর দিকেও তাকাই তাহলে দেখা যাবে এমন কোনো সিরিয়াল নেই যাতে তারা তাদের পূজা-আর্চনা, মন্দির দেখায় না। সংলাপেও তারা তাদের দেব-দেবীর নাম অহরহ উচ্চারণ করছে।
যেটা অবশ্যই ভালো দিক। কিন্তু আমাদের পরিচালকরা এটা করতে রাজি নয়। তাছাড়া দেশাত্মবোধক নাটকের নামেও মাঝে মাঝে ছাইপাঁশ তৈরি হয়৷

বাংলা নাটক নির্মাতাদের জানা উচিত, আধুনিকতা মানে এই নয় যে নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে দিক-ভ্রান্ত হয়ে ভিনদেশি সংস্কৃতি অনুসরণ করে কিছু নির্মাণ করতে হবে। এতে বাংলা নাটক ও সিনেমা আত্মপরিচয়হীন হয়ে পড়ে। বাংলা সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে নাটক - সিনেমা নির্মাণ করা প্রয়োজন। নিজেদের অস্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে একটানা এসব অখাদ্য কিংবা গতানুগতিক নাটক নির্মাণ করা এবার বন্ধ করার প্রয়োজনবোধ দেখা দিয়েছে।

লেখক: ফজলে রাব্বী 

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.