হ্যাঞ্চব্যাক অভ নটরডেম কাহিনী সংক্ষেপ
জল্লাদের সহকারী ঝুঁকলো অচেতন এসমেরালদার দেহটা ধরে গাড়িতে তুলবার জন্যে। অমনি ওপরের গ্যালারি থেকে রশি বেয়ে সড়-সড় ক'রে নেমে এলো কুঁজোপিঠ দানব কোয়াসিমোদো। বিড়ালের ক্ষিপ্রতায় তার বিশাল হাতের দুই ঘুষিতে ভূপাতিত ক'রে ফেললো দুই সহকারী জল্লাদকে। বাচ্চা যেমন পুতুল তুলে নেয় তেমনি সস্নেহে তুলে নিলো জিপসী মেয়েটাকে। তারপর এক ছুটে ঢুকে গেল গির্জার ভেতর। গির্জার দরজা পেরনো মাত্র এসমেরালদাকে মাথার উপর তুলে ফেলল ও। তারপর ওর সেই ভয় ধরানো খসখসে স্বরে চিৎকার : 'অভয়াশ্রম!' 'অভয়াশ্রম! অভয়াশ্রম!'
উল্লাসে চিৎকার ক'রে উঠলো জনতা।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
বইটি পড়ার ইচ্ছা ছিল অনেক আগে থেকেই। দীর্ঘ অবসর পেলে বইটা পড়ব ঠিক করেছিলাম। শেষমেশ সেটা পূরণ হয়েছে!
বইটি পড়ার সময় লেখা দেখলাম এটি নাকি ভিক্টর হুগোর অমর উপন্যাস! পড়ার পর উপলব্ধি করতে পারছি কেন এ কথাটি লেখা ছিল। অনেক দিন পরে একটা ভাল বই পড়লাম যেটা পড়ার পর মনে হয়েছে সময় বৃথা যায়নি, বইটা পড়া স্বার্থক হয়েছে।
বইটা পড়ার পর বর্তমান যুগের সাথে অনেক মিল পেয়েছি তৎকালীন যুগের মানুষের আচরণে! যদিও বইটির পটভূমি গড়ে উঠেছে ১৪৮২ সালের প্যারিস নগরীকে ভিত্তি করে; যখন ডাকিনীবিদ্যার চর্চা করার জন্য ফাঁশিতে ঝুলানোর বিধান ছিল। বর্তমানে এটির প্রচলন না থাকলেও তৎকালীন শাসনব্যবস্থা আর জনগণের আচার-ব্যবহারের সাথে বর্তমানের আমাদের বাংলাদেশের জনগণের কি অদ্ভুুত মিল! বইটি পড়লে আপনারা বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারবেন। এজন্য এ ব্যাপারে আর বিস্তারিত কিছু বলছি না। তবে আশা করছি অনেকেই বুঝতে পেরেছেন আমি কোন আচরণগুলোর কথা বুঝাতে চেয়েছি! যাইহোক, কাহিনীর ব্যাপারে এবার কিছু বলি।
বইটির কাহিনী গড়ে উঠেছে একাধিক চরিত্রকে কেন্দ্র করে। বইয়ের নাম যেই চরিত্রকে কেন্দ্র করে; প্রথমে তাকে তেমন উল্লেখযোগ্য চরিত্র হিসেবে মনে না হলেও শেষমেশ সেই মূল চরিত্রে পরিণত হয়। বইটি মূলত ট্র্যাজেডি ঘরানার। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত পড়লে পাঠকের মন দুঃখে ভরাক্রান্ত হতে বাধ্য।
এ বইয়ের কাহিনী কুঁজোপিঠের বিকৃতমানব কোয়াসিমোদোর, যাকে কেউ পছন্দ করে না। এমনকি শেষমেশ তার পালক পিতাও না!
এ কাহিনী প্যাকেট লা শ্যাঁতেফ্লুরি নামের এক দুঃখিনী মায়ের, যে মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত তার হারানো মেয়ের জন্য বিলাপ করে গেছে।
এ কাহিনী পিয়েরে গ্রিগোয়ার নামের এক ফরাসী অখ্যাত পাগলাটে কবির, যে রুটি রোজগারের আশায় একাধিক পথে ছুটেছে। যে নিজের দুনিয়াতেই মগ্ন। যখন যেটা ভাল লাগে তখন সেটাকেই আপন করে নেয়ার চেষ্টা করে।
এ কাহিনী রাজা একাদশ লুইয়ের অধীনস্ত এক অশ্বারোহী বাহিনীর ক্যাপ্টেন ফিবাস দ্য শ্যাতিউপারের, যে উচ্ছৃঙ্খল, অবাধ্য, নারীদের সাথে ছলনা করায় সিদ্ধহস্ত।
এ কাহিনী নটরডেমের আর্চডিকন ক্লদ ফ্রোলোর, যে সারাজীবন ঈশ্বরের আজ্ঞাবহ থাকা সত্ত্বেও শেষমেশ শয়তানের দাসে পরিণত হয়!
এ কাহিনী এসমেরালদা নামের সুন্দরী এক জিপসী কিশোরীর, যে আজীবন তার জন্মপরিচয়, প্রেম খুঁজে বেরিয়েছে কিন্তু শেষমেশ ব্যর্থ হয়েছে।
মোটকথা বইটিতে কোন চরিত্রকেই অবহেলা করার মত নয়।
তবে দিনশেষে এই কাহিনী কোয়াসিমোদো, ফিবাস, এসমেরালদা আর ক্লদ ফ্রোলোর চতুর্ভুজ প্রেমের কাহিনী; যেখানে সবার প্রেমই একতরফা। ফলে বেদনাদায়ক পরিণতি বরণ করে নিতে হয়।
আর পরিশেষে এই কাহিনী হাঞ্চব্যাক অভ নটরডেমের।
বইটিতে ফুটে উঠেছে সৌন্দর্য কিভাবে পাথরের মত মনকে গলিয়ে ফেলতে পারে, কিভাবে বিপদকে, দুর্ভাগ্য ও হতাশাজনক মৃত্যুকে এগিয়ে নিয়ে আনতে পারে!
যদিও এটা সংক্ষিপ্ত অনুবাদ -- সেবার অধিকাংশ ক্লাসিক বই যেমনটা হয় আরকি। তারপরেও বইটা পড়ে আমি সন্তুষ্ট। অনুবাদের ব্যাপারে একটা কথাই বলব...... অসাধারণ। নিঃসন্দেহে এই বইটি আমার পড়া অন্যতম সেরা বই!
বইটিকে পরিপূর্ণভাবে বিশ্লেষণ করে লেখা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। অনেক কথাই লেখার ছিল কিন্তু লিখতে পারলাম না। এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে লেখা শেষ করার আগে বইটা পড়ার সময় পাওয়া একটি ছোট্ট কৌতুক তুলে দিলাম যেটা পড়ে বেশ হাসি পেয়েছিল।
এউস্তাশে, কেকটা কী করেছিস?
মা, তোমরা যখন জানালা দিয়ে ঐ মেয়েলোকটার সাথে কথা বলছিলে, একটা কুকুর এসে কামড় বসিয়েছিলো কেকটায়, তাই আমিও একটু খেয়েছি।
কী! সবটুকু শেষ ক'রে ফেলেছিস?
আমি না, মা, কুকুরটা। আমি ওকে বলেছিলাম যেন না খায়, কিন্তু ও শুনলো না। তাই আমিও একটু খেয়েছি।
আশা করছি যারা ক্লাসিক বই পড়েন তারা অবশ্যই বইটি পড়বেন। বইটি আপনাদের ভাল লাগবেই একথা আমি অনেক জোর দিয়ে বলতে পারি।
লেখক: ফজলে রাব্বী