খোয়াবনামা - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

বাংলা সাহিত্যের সাহিত্যের অমূল্য রতন আখতারুজ্জামানের খোয়াবনামা। এই বইটা লেখার জন্য লেখক ঘুরেছেন মানুষের দ্বারে দ্

বাংলা সাহিত্যের সাহিত্যের অমূল্য রতন আখতারুজ্জামানের খোয়াবনামা। এই বইটা লেখার জন্য লেখক ঘুরেছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে যাতে উপন্যাসকে যেনো জীবন থেকে নেয়া গল্প মনেহয়। 

আসুন মূল কথায় আসা যাক, ব্রিটিশভারতে ভারত এবং পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হওয়ার সময়কে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ, শোষক শ্রেণী, শাসক শ্রেণীকে নিয়ে খোয়াবনামা রচিত।

বাঙালি নদীর ওপারে কৎলাহার বিল। মাঝি পাড়ার মানুষদের আহার যোগানোর বিধাতা কতৃক ঠিকানা। পাশেই কামার পাড়া যেখানে মূলত হিন্দু ধর্মালম্বীদের বসবাস। আর এর মাঝে কিছু এলাকা আছে মুখোশের আড়ালে ভদ্র সমাজের বসবাস। 

আবার সে যেমন ছিলো তেমনই চলতে থাকে। মুনসী বায়তুল্লাহ মজনুশাহর ফকিরদের সাথে মহাস্থানগড় যাবার পথে ব্রিটিশ টেলারদের হাতে বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়। লোকমুখে শোনা যায় সে কাৎলাহার বিলের উত্তরে পাকড় গাছের ওপরে ওঠে বিল শাসন করে। খোয়াবনামা তাদের চলতে থাকে। বিল হাতছাড়া হয়, জমিদার তার ফায়দা লোটে আর শরাফত মন্ডল তা জুতসই ব্যবহার করে। চেরাগ আলী শোলক বাঁধে, মানুষের খোয়াবের ব্যখ্যা করে বেড়ায় বিনিময়ে কিছু পয়সা তাকে দিতে হয়। তমিজের বাপের তেমন কোনো চাহিদা নেই, মাঝি পাড়ার নিম্নবিত্ত মানুষ খায় আর ঘুমের ঘোরে মোষের দিঘির পারের দিকে ঘোরে আবার বাড়ি ফিরে। চেরাগ আলীর নাতি কুলসুম হলো তার নিত্যদিনের সঙ্গী। ফকিরের বেটি রাঁধে আর তমিজের বাপের নিশ্বাসের গন্ধ সেঁকে আর স্বপ্নে কি যে খোঁজে তা নিয়ে চিন্তায় দিন কাটে । তমিজ জমির স্বপ্নে বিভোর।বৈকুন্ঠ, কেরামত আলী তমিজের বাপের পেছন পেছন ঘুরে কখনো খোয়াবের ব্যখ্যা শোনে, কখনো শোলকের ধাঁধায় পরে ঘুরে ঘুরে শোলক বুনে। কালাম মাঝি সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। কাদের রাজনীতি নিয়ে নিজের পদপদবী কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তার ফাঁদে আটকে পরে।

দেশভাগের রাজনীতিও কম জল ঘোলা হয়নি। ইসমাইলের মতো মানুষেরা মানুষকে স্বপ্ন দেখায় সভ্য সমাজের যেখানে শোষণের বালাই থাকবেনা কিন্ত সেই সভ্য সমাজের মানুষেরা শোষণ করতে বেছে নেয় মাঝি পাড়ার মতো নিম্নবিত্ত মানুষদের আর তাদের শ্রমের বিনিময়ে গড়ে তোলে তাদের সম্পদের পাহাড়। জমিদার থেকে গৃহস্থ কেউ বাদ যায়না শোষণ করার ক্ষেত্রে। বরং সুযোগ পেলে মাঝি পাড়ার কালাম মাঝির মতো অনেকেই আবার সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে। ইসমালের মতো মানুষেরা আসে প্রয়োজনের জন্য, প্রয়োজন শেষ কেটে পরে।স্বপ্ন দেখাতে এসে গড়ে ওঠা স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে ফায়দা লুটে নেয় ষোলআনা। 

ফায়দা লোটা শেষে মানুষ গুলোর ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়না। যে যেমন ছিলো, তেমনই থাকে শোষক শ্রেণী ছাড়া। তাই এ মানুষগুলোর চাহিদার ক্ষেত্র সীমিত। আর সে সুযোগে কুসংস্কার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ধর্ম পালনের বালাই নাই কিন্ত সুযোগ পেলে ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেকের রুটি-রুজির ব্যবস্থাও হয়ে যায়। আনন্দ ফূর্তির জন্য তারা শোলক গাঁথে, পোড়াদহের মেলাও তাদের বাদ যায়না। মেলাকে কেন্দ্র করে তাদের প্রস্ততিও চলে আগেভাগে। 

এদিকে শোষণের হাত থেকে মুক্তির জন্য ফেরারি আসামি তমিজ এমপির চাকরগিরি বাদ দিয়ে নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে তেভাগার খোঁজে বেরিয়ে পরে। ফুলজান তার গর্ভে তমিজের ঔরসজাত সন্তান নিয়ে থেকে যায় হুরমুতুল্লার ঘরেই। স্বপ্ন এগিয়ে চলে তাদের। একদিন তমিজ এসে আবার আগের মতো তারা চাষাবাদ করবে, জমিবর্গা করবে আগের চেয়েও বেশি। কিন্ত সে আর আসেনা! 

তমিজের মেয়ে সখিনা বড় হতে থাকে, একদিন মোষের দিঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখতে পায় জলন্ত হেঁসেলে বলকানো ভাত। খোয়াবনামা জিম্মাদার তমিজের বাপের হাত থেকে একদিন খোয়াবনামা বেহাত হয়ে গিয়েছে। এখন সখিনার খোয়াব। খোয়াবনামা স্বপ্নের ব্যখ্যাদাতা। কিন্তুু স্বপ্নের ব্যখ্যায় যা বিবেচ্য তা স্বপ্ন নয়, স্বপ্ন দেখা মানুষ।


© এমএএস সাব্বির।

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.