"কোন জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার অতীত ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে হবে অথবা বিকৃত করে পেশ করতে হবে একজন তথাকথিত মুসলমান যদি ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভের সুযোগ না পায় এবং তার জাতির অতীত ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে,তাহলে তার মুখ থেকে এমন সব মুসলিম ও ইসলাম বিরোধী কথা বেরুবে যেসব কথা একজন অমুসলমান মুখ থেকে বের করতে অনেক সাতপাঁচ ভাববে।"
বই: বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস
লেখক: আব্বাস আলী খান
ধরন: ইতিহাস
বই পড়ার শুরুতে গ্রন্থকার এর এই কথাটি বইটি পড়ার স্পৃহা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং কথাটির ভিত্তি যে কতটা মজবুত তা বর্তমান সমাজের দিকে তাকিয়ে বুঝতে সক্ষম হয়েছি
৭১২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সিন্ধু প্রদেশে সর্বপ্রথম মুহাম্মদ বিন কাসিম আগমন করেন বিজয়ীর বেশে এবং এটা ছিল ইসলামের বিরাট রাজনৈতিক বিজয়।উপকূলীয় অঞ্চলে আরব বণিক এবং সুফীদের মাধ্যমে এ উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার শুরু হলেও রাজনৈতিক বিজয়ের ফলে দ্রুত মানুষ ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করতে থাকে। বিভিন্ন মুসলিম শাসকদের সময়কাল ধারাবাহিকভাবে লেখক আলোচনা করেছেন।যার মধ্যে ইলিয়াস শাহী বংশ,হোসেন শাহী বংশ অন্যতম।এই হোসেন শাহী হিন্দু মুসলমানের বিভেদ মিটাবার উদ্দেশ্যে সত্যপীরের প্রতিষ্ঠা ও তার পূজা পদ্ধতির প্রবর্তন করেন।প্রকৃতপক্ষে তা ছিল সত্যনারায়ণ পূজার মুসলিম সংস্করণ
এরপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন এবং উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের সুচনার বর্ননা রয়েছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যে মুসলমানরা প্রথম থেকে সোচ্চার এবং বিদ্রোহী ছিল তার প্রমাণ মেলে তিতুমীর এর বিদ্রোহ, হাজী শরীয়ত উল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলন, ফকির আন্দোলন,সাইয়্যেদ আহমেদ বেরলভি'র আন্দোলনের মাধ্যমে।
ইংরেজ শাসনের শুরু থেকেই ইংরেজরা মুসলমানদের শত্রু শ্রেনী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং সব রকম রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা হতে মুসলমানদের বঞ্চিত করে।যার ফলে উপমহাদেশে মুসলমানগণ ধীরে ধীরে অনগ্রসর দরিদ্র জাতিতে পরিণত হতে থাকে।যদিও পরবর্তীতে স্যার সৈয়দ আহমদ এর মত দু একজন মনীষী মুসমানদের দুরাবস্থা দূর করতে এগিয়ে আসেন।কিন্তু রাষ্ট্রীয় বঞ্চনা থেকেই যায়।
এছাড়া আজকের সমাজে যাদের ওহাবী বলে চিহ্নিত করা হয়, সেই ওহাবী নামকরণের ইতিহাস এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে মুসলানদের আন্দোলনকে পরিকল্পিতভাবে ওহাবি আন্দোলন নামকরণ করে মুসলিম জাতির মধ্যে ফাটল ধরাতে ইংরেজদের চক্রান্তও পাঠক জানতে পারব
এছাড়াও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, গঠনের ইতিহাস, টু ন্যাশন্স থিওরীর যুক্তি এবং ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগঠনের প্রেক্ষাপট সহ ইতিহাস অন্তত বিচক্ষণতার সাথে লেখক উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন।
কন্ট্রিবিউটরঃ মুবতাসিন সিয়াম