ব্যভিচার সম্পর্কে আল কুরআন কি বলে?
১. তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না; নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।-- সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত ৩২।
২. ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারীকে অথবা মুশরিকা নারীকে বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণী নারীকে কেবল ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্য হারাম করা হয়েছে।-- সূরা আন-নুর, আয়াত ৩।
কুরআনের আলোকে ব্যভিচার
৩. দুশ্চরিত্রা নারীকুল দুশ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল দুশ্চরিত্রা নারীকুলের জন্য। সচ্চরিত্রা নারীকুল সচ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষকুল সচ্চরিত্রা নারীকুলের জন্য।-- সূরা আন-নূর, আয়াত ২৬।
৪. ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ উভয়কে একশো করে বেত্রাঘাত করো। আল্লাহর বিধান কার্যকর করার ক্ষেত্রে এদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো। ঈমানদারদের একটি দল যেন এদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।-- সূরা আন-নূর, আয়াত ২।
ব্যভিচার সম্পর্কে হাদিস কি বলে?
১. আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সা. বলেছেন, আদম সন্তানের ওপর যিনার যে অংশ লিপিবদ্ধ আছে তা অবশ্যই সে প্রাপ্ত হবে। দু চোখের যিনা হলো দৃষ্টিপাত করা, দু কানের যিনা হলো শ্রবণ করা, রসনার যিনা হলো কথোপকথন করা, হাতের যিনা হলো স্পর্শ করা, পায়ের যিনা হলো হেঁটে যাওযা, অন্তরের যিনা হলো আকাঙ্ক্ষা ও কামনা করা। আর যৌনাঙ্গ অবশেষে তা বাস্তবায়িত করে অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।-- সহীহ আল-বুখারী, সহীহ আল-মুসলিম, সুনানে আবূ দাউদ, সুনানে আন-নাসায়ী।
২. আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যভিচারী ব্যভিচার করার সময় মুমিন থাকে না। কোনো শরাব পানকারী শরাব পান করার সময় মুমিন থাকে না। কোনো চোর চুরি করার সময় মুমিন থাকে না।-- সহীহ আল বুখারী, সহীহ আল মুসলিম।
৩. আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, কোন পাপটি সবচেযে বড়? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর কোনো সমকক্ষ সাব্যস্ত করবে, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, তোমার সাথে আহার করবে এ ভয়ে তোমার সন্তানকে হত্যা করা। আমি বললাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা করা।-- সহীহ আল বুখারী।
৪. মুহাম্মাদ সা. বলেন, "আমি একদিন স্বপ্নে একটি চুলা দেখতে পেলাম যার ওপরের দিক ছিল সরু এবং ভেতরের দিক ছিল প্রশস্ত, যেখানে আগুন উত্তপ্ত হচ্ছিল এবং তার ভেতরে নারী পুরুষেরা চিৎকার করছিল। আগুনের শিখার ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে তারাও ওঠানামা করছিল, এ অবস্থা দেখে আমি জিবরাইল আ.-কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তিনি উত্তর দিলেন, এরা হলো যিনাকারী নারী-পুরুষ।"--সহীহ আল-বুখারী
হাদিসের আলোকে ব্যভিচার
৫. উবাদা বিন আস-সামিত বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি, আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। আল্লাহ সেসব মহিলাদের জন্য আদেশ জারি করেছেন। যখন একজন অবিবাহিত পুরুষ একজন অবিবাহিত নারীর সাথে ব্যভিচার করে, তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন পেতে হবে। আর বিবাহিত পুরুষের সাথে বিবাহিত নারীর ব্যভিচারের ক্ষেত্রে, তাদেরকে একশত বেত্রাঘাত এবং পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে।-- সহীহ মুসলিম।
৬. আল্লাহর রাসূল বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীকে পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি প্রদান করতেন এবং, তাঁর পরে, আমরাও পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি প্রদান করতাম, আমি ভয় করি যে কালের অতিক্রমের সাথে সাথে, মানুষ হয়তবা এটি ভুলে যাবে এবং হয়তো বলবে: আমরা আল্লাহর কিতাবে পাথর নিক্ষেপের শাস্তি খুঁজে পাই নি, এবং আল্লাহর নির্দেশিত এই কর্তব্য পরিত্যাগ করে বিপথে যাবে। পাথর নিক্ষেপ হলো আল্লাহর কিতাবে দেয়া ব্যভিচারী বিবাহিত পুরুষ ও নারীদের জন্য ধার্যকৃত একটি দায়িত্ব যখন তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়, অথবা যদি গর্ভধারণ ঘটে, অথবা যদি দোষ স্বীকার করা হয়। --সহীহ মুসলিম।
৭. মা'য়িয মুহাম্মদ সা.-এর নিকট এলো এবং তাঁর উপস্থিতিতে নিজের ব্যভিচার করার কথা চারবার স্বীকার করলো, তাই মুহাম্মাদ সা. তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করার আদেশ দিলেন। কিন্তু হুজ্জালকে বললেন: "তুমি যদি তাকে তোমার কাপড় দ্বারা ঢেকে দিতে, তাহলে তা তোমার জন্য ভালো হতো।" --সুনানে আবূ দাউদ।