বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের পরাজয় - ইয়ারমুক

রোম—এক দীর্ঘ সময়ের পৃথিবীর সুপার পাওয়ার। একালের আমেরিকা-রাশিয়ার মতো তাদের প্রতিপক্ষ ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যটির নাম পারস্য। পৃথিবীময় ক্ষমতা বিস্তারের এক উন্

বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের পরাজয়

 রোম—এক দীর্ঘ সময়ের পৃথিবীর সুপার পাওয়ার। একালের আমেরিকা-রাশিয়ার মতো তাদের প্রতিপক্ষ ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যটির নাম পারস্য। পৃথিবীময় ক্ষমতা বিস্তারের এক উন্মত্ত লালসায় লোলুপ দুটি সাম্রাজ্য।


পৃথিবীর আদিকাল হতে বংশধারা খুঁজতে গেলে নুহ আলাইহিস সালামের যুগের মহাপ্লাবন পর্যন্ত গিয়ে থেমে যেতে হয়। এরপর বেঁচে থাকা মানুষজন তাঁর বংশধর। খোদ কুরআনে কারিমেও একথা বলা হয়েছে—“তাঁর বংশধরদেরকেই আমি অবশিষ্ট রেখেছিলাম।” [সুরা সাফফাত ৩৭ : ৭৭]

(আরো পড়ুনঃ ইসলামিক পদ্ধতিতে ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠার উপায়)

নুহ আলাইহিস সালামের বংশধর বলতে তাঁর তিন পুত্র ও তৎপরবর্তী সন্তানদের কথা বলা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উক্ত আয়াতে নুহ আলাইহিস সালামের তিন পুত্র হাম, সাম ও ইয়াফেসের কথা বলা হয়েছে। [সুনানুত তিরমিজি, হাদিস নং : ৩২৩১]

সুতরাং আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষ বেঁচে আছে, তাদের সবাই গোড়ায় নুহ আলাইহিস সালামের তিন পুত্রের যে-কারও বংশধর। ইবনে কাসির রহ. এমনটাই বলেছেন। [আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ১/২৬৮]


এখন প্রশ্ন হলো, রোমকরা তাহলে এই তিনজনের কার বংশধর?


বংশীয়ভাবে রোমকদের মূলত দুটি ধারা। অতি প্রাচীনকালে রোম বলতে বোঝানো হতো গ্রিক বা ইউনানিদেরকে। ইউনান হলো ইয়াফেস ইবনে নুহের সন্তান। সুতরাং আদি রোমকদের পূর্বপুরুষ হলো নুহ আলাইহিস সালামের পুত্র ইয়াফেস। সুনানে তিরমিজির হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে দেখা যায়, “নুহ আলাইহিস সালামের সন্তান সাম হলো আরবদের পিতা, হাম হলো হাবশিদের পিতা আর ইয়াফেস হলো রোমকদের পিতা।” [সুনানুত তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৯৩১]


এখানে আদি রোমকদের বংশধারার কথা বলা হয়েছে। বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও ইতিহাসবিদ হাফেজ ইবনে আবদুল বার রহ. এই সংশয় নিরসন করে দিয়েছেন।[আল-কাসদু ওয়াল উমাম ফিত-তা’রিফি বি-উসুলি আনসাবিল আরাবি ওয়াল আজাম, পৃষ্ঠা : ১০, ইবনে আবদুল বার] ইবনে আবদুল বারের এই বক্তব্য অনুসরণ করে মুফাসসির ও ঐতিহাসিক ইবনে কাসির রহ.ও একই মত দিয়েছেন।[আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ১/২৬৯] পরবর্তীকালে সুনানুত তিরমিজির ব্যাখ্যাকার আবদুর রহমান মুবারকপুরী রহ.ও একই কথা লিখেছেন।


রোমকদের দ্বিতীয় ধারাটি হলো পরবর্তীকালে রোম সাম্রাজ্যের অধিকারী প্রসিদ্ধ রোমক জাতি। এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, আদি রোমকদের সাথে পরবর্তী রোমকদের বংশীয় কোনো যোগসূত্র নেই। বরং তারা উভয়ই সামের বংশধর। হাফেজ ইবনে আবদুল বারের বিবরণ থেকে জানা যায়, সমগ্র আরব জাতি, বনি ইসরাইল ও পরবর্তী রোমক জাতি—সবাই সামের বংশধর। অপরদিকে আদি রোমকরা হলো গ্রিক জাতি। তারা ইউনান ইবনে ইয়াফেস ইবনে নুহের বংশধর। বিশেষজ্ঞগণ এই বিষয়ে একমত। [আল-কাসদু ওয়াল উমাম ফিত-তা’রিফি বি-উসুলি আনসাবিল আরাবি ওয়াল আজাম, পৃষ্ঠা-৯-১০, ইবনে আবদুল বার]


পরবর্তীকালে রোমকদের আদিপুরুষ ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বংশধর; ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বড় পুত্র ইসহাক ইবনে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। ইসহাকের এক পুত্রের নাম ইয়াকুব ইবনে ইসহাক, অপর পুত্রের নাম ঈছ ইবনে ইসহাক। আল্লামা ইয়াকুত হামাভির তথ্য অনুযায়ী ঈছ হলেন পিতার বড় সন্তান। [মু’জামুল বুলদান ৩/১১০, ইয়াকুত হামাভি] পিতা ও পিতামহের মতো ইয়াকুব ইবনে ইসহাক আলাইহিস সালাম মনোনীত হন আল্লাহ তাআলার দূত ও নবী হিসেবে। ইয়াকুব আলাইহিস সালামের অপর নাম ইসরাইল। কুরআন-হাদিস ও ইতিহাসে অসংখ্যবার বিবৃত-হওয়া বনি ইসরাইল বা ইসরাইল সন্তানরা তাঁর বংশধর। ধিকৃত যে জাতি হজরত উজাইর আলাইহিস সালামকে বানিয়েছিল আল্লাহর পুত্র, হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে ত্যাগ করে গ্রহণ করেছিল গো-বৎস; আর নিজেদের বংশোদ্ভূত নয় বলে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরোধিতায় বিলিয়ে দিয়েছে পুরোটা জীবন।


ইয়াকুব আলাইহিস সালামের অপর ভাই ঈছ ইবনে ইসহাকের ঘরে জন্ম নেয় একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান। নাম রাখা হয়—রোম। এই রোম ইবনে ঈছ ইবনে ইসহাকের বংশধরই হলো রোমকরা।[মু’জামুল বুলদান ৩/১১০, ইয়াকুত হামাভি] হাফেজ ইবনে কাসির রহ.-এর ভাষায়—বনি ইসরাইলের চাচাতো ভাই।[তাফসিরুল কুরআনিল আযিম ৬/৩১৭, ইবনে কাসির]


রোমকদের অপর নাম ‘বনুল আসফার’—ফ্যাকাশে ব্যক্তির বংশধর। একাধিক হাদিসে রোমকদের কথা বলতে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ‘বনুল আসফার’ নামে উল্লেখ করেছেন।[সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭, ৩১৭৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৭৭৩; সুনানু ইবনি মাজাহ, হাদিস নং : ৪০৪২] কথিত আছে, রোগের কারণে রোমকদের পূর্বপুরুষ ঈছ ইবনে ইসহাকের চেহারা সর্বদা হলদেটে-ফ্যাকাশে থাকত। একারণে রোমকদেরকে বনুল আসফার বলা হয়। কিন্তু ইয়াকুত হামাভির মত হলো—রোমকরা সাধারণত স্বর্ণকেশী হতো। স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই ছিল রঙটা। ফলত দেখতে হলদেটে-ফ্যাকাশে লাগত। যে-কারণে তাদেরকে বনুল আসফার বলে নামকরণ করা হয়।[মু’জামুল বুলদান ৩/১১০-১১১, ইয়াকুত হামাভি] কারণ ও ঘটনা যাই হোক, রোমকদের অপর নাম হলো বনুল আসফার; এটুকু তথ্য আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


বংশীয়ভাবে রোমকরা নবীপুত্রের উত্তরসূরি হলেও ধর্মীয়ভাবে তারা ছিল গ্রিক ধর্মের অনুসারী। আদি রোমক ও পরবর্তী রোমকদের মাঝে এটাকে বলা যায় যোগসূত্র। ফলত রোমকরা সপ্ত গ্রহের উপাসনা করত। নামাজ পড়ত উত্তর মেরুর দিকে ফিরে। দামেশক প্রতিষ্ঠার পর সেখানে তারা অনেকগুলো গ্রিক উপাসনালয় ও উত্তরমুখী নামাজঘর নির্মাণ করে। রোমকরা দীর্ঘকাল যাবত গ্রিকধর্মের অনুসারী ছিল। সময়ের এই হিসাবটা হযরত ইসা আলাইহিস সালামের আগমনের প্রায় তিনশো বছর পর পর্যন্ত। ইসা আলাইহিস সালামের আগমনের তিনশো বছর পর রোমকরা খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। সর্বপ্রথম খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন রোম-সম্রাট কনস্টান্টিন ইবনে কস্টাস।[তাফসিরুল কুরআনিল আজিম ৬/৩১৭, ইবনে কাসির]


বই : ইয়ারমুক

জনরা : ইতিহাস

লেখক : মাহমুদ সিদ্দিকী

প্রচ্ছদ : কাজী যুবাইর মাহমুদ

প্রকাশক : Punoray Prokashon


© মাসুম বিল্লাহ হামীম

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.