এ প্রজন্মের বেশিরভাগ মানুষের কাছে পরিণীতা নামটি শুনলেই যেন সবার চোখে ভেসে উঠে ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ভারতীয় বাংলার শুভশ্রী অভিনীত সেই ছবিটির কথা!
চলুন না, আজ জেনে নেই ১৯১৪ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ের কথা, যেটি লিখেছেন আমাদের অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়! পরিণীতা বইটির নাম! এখানে বেশ কিছু চরিত্র আছে, ললিতা, শেখরনাথ, গিরীনবাবু, আন্নাকালী, গুরুচরণ, নবীন রায়, ভুবনেশ্বরীসহ আরো অনেকেই।
শেখরনাথ গল্পের মূল নায়ক, বেশ শৌখিন ধাচের মানুষ! বেশ পরিপাটি আর সুসজ্জিত থাকে তার ঘর, যার একমাত্র কারণ ললিতা। মেয়েটির বাবা-মা মারা যাওয়ার পর মামার বাড়িতেই বড় হয়েছে। আর মামার বাড়ির পাশেই শেখরদের বাড়ি। ছোট্ট বেলা থেকে শেখর ললিতাকে পড়াশোনা করিয়েছে, আদর-শাসন করেছে। ললিতাকে শেখরের মা ভুবনেশ্বরীও বেশ স্নেহ করতো। শেখরের ঘরের কোথায় কি আছে তা সে নিজে না জানলেও ললিতা বেশ জানতো!
ললিতাকে ওর মামাতো বোনেরা সবাই সেজদি বলে ডাকতো! ললিতা এমনই এক মায়াবী চরিত্র যে, গল্পের পরতে পরতে এই চরিত্রটির আগমন পড়ার আগ্রহ বেশ বাড়িয়ে দেয়৷ শ্যাম বর্ণের এ মেয়েটি বেশ হাসিখুশি, তাস খেলায় দক্ষ, কাজে পারদর্শী, সবার কাছে পছন্দের, ভিক্ষুক এলে কখনোই খালি হাতে ফেরাতো না, আর শেখরের আলমারির চাবি তার কাছেই থাকতো! যখন ইচ্ছে টাকা বের করে নিয়ে খরচ করতো, শেখর কিছুই বলতো না কারণ সে জানে, টাকা দিয়ে হয় ঘরের কিছু জিনিস করছে, নাহয় ভিক্ষুককে দিচ্ছে, নাহয় শেখরের প্রয়োজনীয় কিছুই কিনছে!
ললিতার মামা গুরুচরণের নিজের ছিলো পাঁচ মেয়ে। এক মেয়ের বিয়ের পণ শোধ করার জন্যে শেখরের বাবার কাছ থেকে নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে অনেক টাকা ধার নেয়! সেটা শোধ করতে পারছিলেন না। কারণ তিনি মোটে ষাট টাকা বেতনের একজন ব্যাংকের কেরানী ছিলেন। ললিতার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছিল বলে এ নিয়ে গুরুচরণের চিন্তার শেষ ছিলো না!
এদিকে শেখরের বাবা নবীন রায় ছিলো প্রচন্ড লোভী একজন মানুষ। কাজেই নিজের ছেলের বিয়ে ঠিক করছিলো এমনই এক ঘরে যেখান থেকে বড় অঙ্কের পণ পেতে পারে। কিন্তু কোন এক গোধুলী লগ্নে আন্নাকালি (ললিতার মামাতো বোন) তার পুতুলের বিয়ে দিচ্ছিলো। তখন ঠাট্টাচ্ছলে ললিতা শেখরকে গাধা ফুলের মালা পড়িয়ে দেয়। এবং শেখর ও সেটি সম্পুর্ণ করার জন্যে ললিতাকেও মালা পড়িয়ে দেয় এবং ললিতাকে বুঝায় তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। দুজন ছাড়া কেউই এ ব্যাপার টা জানতো না! শেখর তখন বুঝতে পারে, সে আসলে মনে মনে ললিতাকে ভালোবাসতো সেটা এতদিন সে নিজেই বুঝতে পারেনি! ললিতাও শেখরের কথা শুনে মেনে নেয় যে সে বিবাহিত!
এদিকে ঋণের দায়ে জর্জরিত ললিতার মামার পাশে এসে দাঁড়ায় শেখরের ই বয়সী ললিতার সইয়ের মামা গিরীন! শেখরের বাবার ঋণ শোধ করতে সহায়তা করে। ললিতার মামা মারা যাওয়ার আগে গিরীনের কাছে কথা নেয় যেন তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আত্মীয়তায় রূপ দেয়! ললিতার সাথে গিরীনের বিয়ের বন্দোবস্ত করে। মামার অনুপস্থিতিতে গিরীন হয়ে যায় ওদের অভিভাবক! তারা পশ্চিমে চলে যায় সপরিবারে!
এরপর বছর খানেক কেটে যায়। ললিতার মামী একদিন তাদের বাড়িতে আসে বাড়িটি বিক্রি করবে বলে। তারা বাড়িটি শেখরদের কাছেই বিক্রি করতে চায়! শেখর ভাবে ললিতা ততদিনে পুরানো সব ভুলে নিশ্চয়ই গিরীনের সাথে সংসার করছে তাই শেখর ও অন্য জায়গায় বিয়ের জন্যে মত দিয়ে দেয়! গিরীন তখন শেখরের কাছে সবচেয়ে অপছন্দের পাত্র!
ইতোমধ্যে গিরীন একদিন শেখরের কাছে আসে। যখন কথায় কথায় হঠাৎ বলে উঠলো, সেজদি (ললিতা) আপনার কথা বলছিলো বাড়ি বিক্রির কথা যেনো আপনার কাছে বলি! শেখর তো এটা শুনে অবাক! সেজদি মানে? এরপর কি হয়েছিলো সে কথা আর এখানে বলা চলে না।এর জন্যে আপনাকে শেষ অবদি পড়তে হবে বইটি।
লেখিকা: সুমাইয়া আহমেদ